ঢাকা,শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

বর্ষায় পুরো এলাকা ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা

চকরিয়া পৌরসভার সবুজবাগে ড্রেনের জায়গা জবরদখলে নিয়ে রাস্তা নির্মাণ

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
চকরিয়া পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের সবুজবাগ এলাকায় পানি নিষ্কাশনে নির্মাণাধীন ড্রেনের জায়গা দখলে নিয়ে ব্যক্তিগত বাড়ির রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় একটি দখলবাজ চক্রের যোগসাজশে রাসেল নামের প্রবাসফেরত এক ব্যক্তি দাপট দেখিয়ে স্থানীয় লোকজন ও পৌরসভার নোটিশ অমান্য করে সম্প্রতি পানি নিষ্কাশনের গতিপথ সংকোচিত করে রাস্তাটি তৈরি করেছে।
এভাবে পানি চলাচলের ড্রেনের জায়গা বেদখল হয়ে পড়ার কারণে পৌরসভার সবুজবাগ এলাকা ছাড়াও আশপাশের এলাকার অন্তত পাঁচ হাজার পরিবার বর্ষা মৌসুমে পানিবন্দি দুর্ভোগে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন চকরিয়া পৌরসভার সচিব মাস উদ মোর্শেদ। তিনি বলেন, দখলে নেওয়া সবুজবাগ এলাকার ওই পয়েন্টে চকরিয়া পৌরসভার উদোগে নির্ধারিত ডিজাইন অনুযায়ী আধুনিকমানের ড্রেন নির্মাণকাজ চলমান। ইতোমধ্যে ফুলতলা স্বপ্নপুরী ক্লাব লাগোয়া ব্রীজ থেকে পুর্বদিকে সবুজবাগ মসজিদ মোড় পর্যন্ত এলাকায় ড্রেন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।

অতিসহসা অবশিষ্ট এলাকায় চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ড্রেন নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। এরই মধ্যে স্থানীয় কতিপয় মহলের চত্রছায়ায় রাসেল নামের এক ব্যক্তি পানি নিষ্কাশনে পৌরসভার নির্মাণাধীন ড্রেনের জায়গা দখলে নিয়ে সেখানে মাটির বস্তা ফেলে তার বাড়ি যাবার পথ তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে চকরিয়া পৌরসভার সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরীর নির্দেশে সেখানে ( ওই পয়েন্টে) কোনধরনের কাজ না করতে অভিযুক্ত রাসেলকে পৌরসভার পক্ষথেকে দুইদফা নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অফিসের লোকজন ঘটনাস্থলে সরাসরি গিয়ে ড্রেনের জায়গায় ভরাট কাজ না করতে বারণও করেছে।

পৌর সচিব আরও বলেন , পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরীর নির্দেশনা এবং পৌরসভার নোটিশ অমান্য করে কতিপয় মহলের যোগসাজশে রাসেল নামের অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি গত দুইদিনে পানি নিষ্কাশনের ড্রেনের গলিপথ দখলে নিয়ে মাটির বস্তা ফেলে তার বাড়ি যাবার পথ তৈরি করে নিয়েছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী বলেন, চকরিয়া পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের সুবজবাগ এলাকার আশপাশে চকরিয়া আবাসিক মহিলা ডিগ্রি কলেজ, চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ, চকরিয়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ছাড়াও পুর্বঅংশে চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালের মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের পানি নিষ্কাশন হয়ে থাকে সবুজবাগ এলাকা দিয়ে নীচের দিকে মাতামুহুরী নদীতে চলে যাওয়া ড্রেনের মাধ্যমে।
এছাড়াও পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের হাসপাতাল পাড়া, খোদারকুম, চকরিয়া ফায়ার সার্ভিস এরিয়ার হাজারো পরিবারের দৈনন্দিন ব্যবহৃত পয়:নিষ্কাশনও ড্রেনটির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।

সবুজবাগ এলাকার স্থানীয় জনগণের অভিযোগ, এভাবে পৌরসভার পানি নিষ্কাশনের গতিপথ দখলে নিয়ে রাস্তা বানানোর কারণে সংকোচিত হয়ে পড়েছে ড্রেনের জায়গা। এতে বর্ষা মৌসুমে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে পুরো সবুজবাগ এলাকা ভবিষ্যতে পানিতে ডুবে যাবে । এই অবস্থায় সবুজবাগ, চকরিয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজ, চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ, চকরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এলাকা ছাড়াও আশপাশ এলাকার কমপক্ষে পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি দুর্ভোগে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সবুজবাগ ও আশপাশ এলাকার জনসাধারণ অবিলম্বে ড্রেনের জায়গা দখল করে তৈরি করা রাস্তাটি কেটে দিয়ে উক্ত জায়গা উদ্ধারপুর্বক আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে পানি নিষ্কাশনের পথ উন্মুক্ত রাখার জন্য চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান, চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) মোহাম্মদ তফিকুল আলম ও চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী এবং সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, সবুজবাগ এলাকায় ড্রেনের জায়গায় ব্যক্তিগত বাড়ির রাস্তা নির্মাণ করার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের পাঠাই। তারা সেখানে গিয়ে পানি নিষ্কাশনের গতিপথ সংকোচিত না করতে জড়িত চক্রকে বারণ করেছে। এছাড়াও ভরাট কাজ বন্ধ রাখতে পৌরসভার পক্ষথেকে দুইদফা নোটিশও দেওয়া হয়েছে।

মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, তারা যেহেতু পৌরসভার নোটিশ ও নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে ড্রেনের জায়গা দখলে নিয়ে ভরাট করেছে, এখন পৌরসভার পক্ষথেকে নিযম মোতাবেক অভিযান চালিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পানি নিষ্কাশনের গতিপথ সচল রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, জনস্বার্থ পরিপন্থি যে কোন কাজ আইনগতভাবে অবৈধ। সেজায়গায় জনগনকে দুর্ভোগে ফেলে পানি নিষ্কাশনের গতিপথ দখলে নিয়ে ব্যক্তিগত বাড়ির জন্য রাস্তা তৈরি করা কতটুকু যৌক্তিক।

তিনি বলেন, জনস্বার্থ বিরোধী সকল কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন ইতিবাচক ভুমিকা রাখবে। অনুরূপভাবে সবুজবাগ এলাকার ড্রেনের জায়গায় নির্মিত ওই স্থাপনা উচ্ছেদে চকরিয়া পৌরসভাকে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে। ##

পাঠকের মতামত: